এইচডিডি (HDD) এবং এসএসডি (SSD) কী? এবং তুলনামূলক পর্যালোচনা
বিশ্বজুড়ে যখন প্রযুক্তির জয়জয়কার তখন এইচডিডি(HDD) এবং এসএসডি(SSD) সম্পর্কে শোনেনি এমন মানুষ নেই বললেই চলে। তার পরেও একটু ধারনা দেয়া যাক:
এগুলো
এক প্রকার কম্পিউটার হার্ডওয়্যার , যাকে বলা হয় স্টোরেজ ডিভাইস। অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে
কম্পিউটারে তথ্য-উপাত্য সংরক্ষন করে রাখতে এই ডিভাইস গুলো ব্যবহার করা হয়। এই ডিভাইস
গুলো
ইন্টার্নাল, এক্সটার্নাল
অথবা পোর্টেবল হতে পারে। আবার কখনো কখনো এই ডিভাইস গুলোকে নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে যুক্ত রাখা
হয় যেন ইন্টারনেট এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
এইচডিডি (HDD) কি?
এইচডিডি (HDD) এর পূর্ণ রূপ হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ। এটি এক প্রকার স্টোরেজ ডিভাইস যেখানে চুম্বক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তথ্য সংরক্ষন করা হয়। এখন হার্ড ডিস্ক কথাটি থেকেই বোঝাই যাচ্ছে ডিস্ক বা চাকতি জাতীয় কিছু একটা আছে। আধুনিক একটি হার্ড ডিস্ক এর অ্যালুমিনিয়ামের কভারটি খুললে দেখা যায় কয়েকটি ডিস্ক বা চাকতি কয়েক স্তরে সাজানো আছে, যাদের প্লেটার বলা হয়। সকল তথ্য বা ডেটা ম্যাগনেটিক হেড এর মাধ্যমে প্লেটার-এ রাইট বা লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রত্যেকটি চাকতি খুব পাতলা এবং শক্ত হয়ে থাকে। এসব চাকতির সংখ্যা হার্ড ডিস্ক-এ যত বেশি হবে তার মোট ধারণক্ষমতা তত বেশি হবে। এক কথায় এই চাকতি গুলোর সংখ্যা হার্ড ডিস্কের ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করে। প্রত্যেকটি চাকতি একটি শক্তিশালী মোটরের সাথে যুক্ত থাকায় একইসাথে অনেক উচ্চ গতিতে ঘুরতে পারে। এই ঘূর্ণনের উপর নির্ভর করে তার তথ্য ট্রান্সফার রেট। অর্থাৎ ঘূর্ণন যত বেশি হবে তথ্য ট্রান্সফার তত দ্রুত হবে। এই ঘূর্ণন মাপার একক হলো আরপিএম (rpm) বা রেভোলুশনস পার মিনিট। (rpm) বা রেভোলুশন পার মিনিট বলতে বুঝায়, এক মিনিটে ডিস্কের ঘুর্ননের সংখ্যা। সাধারণত এখনকার হার্ড ডিস্ক গুলোর ঘুরার পরিমান (rpm) হার্ড ডিস্ক ভেদে ৪,২০০ থেকে ১৫,০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে।
এস এস ডি কি?
এসএসডি (SSD) এর পূর্ণ রূপ
সলিড স্টেট ড্রাইভ। এর কোন মেকানিক্যাল পার্ট নেই, পুরোটাই
ইলেক্ট্রনিক। এটি এক প্রকার ফ্ল্যাশ মেমোরি ডিভাইস। এগুলো অনেক উচ্চ গতি সম্পন্ন
এবং ব্যয়বহুল। এসএসডি’র (SSD) তথ্য সংরক্ষন করার পদ্ধতি এইচডিডি(HDD) থেকে সম্পূর্ণই আলাদা। এসএসডি’র ভেতরে (NAND) ন্যান্ড ফ্লাশ মেমোরি চিপ থাকে। সিলিকন নির্মিত
এই মেমোরি চিপের মধ্যে তথ্য সংরক্ষন করা হয়। আর এই চিপকে নিয়ন্ত্রণ করে ফ্ল্যাশ
কন্ট্রোলার। মেমোরি চিপের মধ্যে কন্ট্রোলার দ্বারা তথ্য জমা করা হয়। কন্ট্রোলারের
ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এসএসডির তথ্য রিড ও রাইট করার ক্ষমতা।
এইচডিডি (HDD) এবং এসএসডি (SSD) এর কার্যক্ষমতা
সাধারনভাবে কার্যক্ষমতার দিক থেকে
এসএসডি এইচডিডি’র থেকে বেশ এগিয়ে। কারন এসএসডিতে তথ্য রিড-রাইট করতে কন্ট্রোলার
ব্যবহার করা হয়। যা এইচডিডি থেকে দ্রুত তথ্য রিড-রাইট করতে পারে। এছাড়াও সব তথ্য
গুলো একত্রে একটি ফ্ল্যাশ মেমোরির ভেতর অবস্থান করে। যার ফলে যখন কোনো তথ্যর জন্য
অনুসন্ধান করা হয় তখন এটি খুব দ্রুত রিড করতে পারে। আর অপর দিকে এইচডিডিতে
প্লেটার-এ তথ্য রিড-রাইট করতে রিড/রাইট হেড ব্যবহার করা হয়। এইচডিডিতে তথ্যগুলো
এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যখন কোনো তথ্যর জন্য অনুসন্ধান করা হয় তখন
প্লেটার ঘুরতে থাকে এবং হেড দিয়ে এলোমেলো ভাবে তথ্য রিড করা হয়। তাই এতে সময় লাগে।
কখনো কখনো প্লেটারে প্রচুর ক্লাষ্টার জমে যায়, ঠিকভাবে
রক্ষনাবেক্ষন করা না হলে এর কারণে স্পিড কমে যায়।
এইচডিডি
(HDD)
এবং এসএসডি (SSD) এর মূল্য এবং ধারণক্ষমতা
মূল্য এবং ধারণক্ষমতার দিক থেকে এইচডিডি এসএসডি’র থেকে অনেক এগিয়ে আছে। মাত্র কয়েক হাজার টাকা ব্যয় করলে একটি টেরাবাইট এইচডিডি কেনা যায়। আবার টেরাবাইট এসএসডি কিনতে দশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। তাছাড়া বাজারে অনেক সহজেই ৮ টেরাবাইট এইচডিডি কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু বাজারে সহজে টেরাবাইট এসএসডি খুঁজে পাওয়া যায় না।
কম্পিউটারের জন্য কোনটি ব্যবহার করা উচিৎ? এইচডিডি? না এসএসডি?
কেনার পূর্বে প্রয়োজন মাফিক বিবেচনা করা উচিৎ। যদি
আপনার বেশি
তথ্য সংরক্ষন করার প্রয়োজন হয় তবে এইচডিডি ব্যবহার করা উচিৎ। কারণ, বেশি ধারণক্ষমতা
সম্পন্য
এসএসডি এখনো বাজারে খুব একটা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও তা অনেক চড়া মূল্যে কিনতে হয়। যদি বেশি
তথ্য সংরক্ষন করার প্রয়োজন না হয় তবে অবশ্যই এসএসডি ব্যবহার করা উচিৎ। আবার
চাইলে একই সাথে এইচডিডি এবং এসএসডি দুটোই ব্যবহার করা যাবে হাইব্রিড
স্টোরেজ সিস্টেম। এইউ হাইব্রিড স্টোরেজ সিস্টেমে এসএসডিকে শুধু অপারেটিং সিস্টেমেরে
জন্য আর এইচডিডিকে তথ্য সংরক্ষনের জন্য ব্যবহার করতে হবে। এতে অপারেটিং সিস্টেমক
অনেক দ্রুত কাজ করবে। গেম এবং সফটঅয়ার ইন্সটল ও লোড হতে কম সময় নেবে। কোড
এডিটর এবং আইডিই গুলো চালু করতে অনেক কম সময় লাগবে। যদিও সাধারন ব্যবহারকারীদের
ক্ষেত্রেও অনেক দ্রুত অপারেটিং সিষ্টেম লোড হওয়াটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।
No comments